ডিম সেদ্ধ
- আরে, খা তো বাঁড়া, নখরা করিস না।
- আরে, বাল, একদিন খেলে কিছু যাবে আসবে না।
- এখানে কিন্তু আর কিছু পাবি না এখন, খেয়ে নে ভাই।
যথাক্রমে, বাবুয়া, মন্তা আর সোনুর মিঠে-কড়া সাধাসাধিতে সেদ্ধ ডিমের প্রায় অর্ধেক ভেঙে, তা দিয়ে ঝোলমখা ভাতের একটা গ্রাস মুখে পুরে দিল শক্তি। জিন্সের সাথে হাতা গোটানো-কলার তোলা চেক শার্ট, বুকের একটা বোতাম খোলা, বড় সাইজের একটা রুমাল সরু করে ভাঁজ করে রাখা ঘাড়ের ওপর, চোখে সস্তা সানগ্লাস। বগলের ঘামের দুর্গন্ধ ছাপিয়ে তার নাকে ঝাপ্টা মারল ডিমের ঝোলের সুঘ্রাণ। চিবোতে চিবোতে বুঝল খিদে পেয়েছিল খুব। সেই কখন বেরিয়েছে বাড়ি থেকে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই খাচ্ছিল ওরা। ডিম-ভাত। ঝাল ঝাল অমৃতসম, গরিবের পুষ্টি।
প্রায় ছবছর পার্টি করলেও এই প্রথম ব্রিগেডে এল, শক্তি। তবে তার চেয়েও যেটা বড় কথা তা হল, শক্তি আজ প্রায় ছবছর পর আবার ডিম খেল। তাও সেদ্ধ!
কেন? মানে এতগুলো বছর ডিম না খাওয়ার কী কারণ থাকতে পারে? গরিব ঘরের ছেলেই তো ছিল শক্তি। তবে? সস্তায় ও সুলভে এত ভালো খাবার আর কী আছে, ভূ-ভারতে? আবার এমনও নয় যে রেলবস্তির শক্তি নন্দী নিরামিষাশী। খাসি, মুরগি, গিলে-মেটে তো সে দিব্যি খায়; ঝালে-ঝোলে রুই, কাতলা, বাটা, চারাপোনা, ভোলাও তো।
ডিম না খাওয়ার কারণ অবশ্য একটা আছে। সেটা বাবুয়া, মন্তা, সোনুর মতো আরও অনেকেই জানে, যারা শক্তিকে চেনে এবং জানে।
সেই যে মফস্বলি রেল স্টেশন, পিনকোডে যদিও বা লেখা থাকে কলকাতা, তার থেকে খানিক এগিয়েই লাইনের ধার ঘেঁষে যে বস্তি তারই মধ্যে একচালা টালির ছাদের দমবন্ধ-ঘুপচি ঘরে দুই বোন আর বাপ-মা নিয়েই বড় হয়ে উঠেছিল শক্তি। বাপ ছিল জোগাড়ে আর মা ঠিকে ঝি। বোন দুটো তার চেয়ে অনেকটাই ছোট। মাতাল বাপের ঠাপের শব্দ শক্তি কতবার শুনেছে আর মায়ের প্রায় গোঙানির মত শীৎকার। চুপটি করে পাশ ফিরে শুয়ে থাকত শক্তি, ইচ্ছে করে ফোঁসফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে মেঝেতে মিলনরত বাপ-মাকে ভ্রম দিত তার গভীর ঘুমের। ফলস্বরূপ তানিয়া আর মুনিয়া, একজন প্রায় দশ আর একজন চোদ্দ বছরের ছোট। হ্যাঁ, রাজুর কথা বলা হয়নি, বছর তিনেকের ছোট, ভাই, সেও এসেছিল বটে। ঘুড়ি ধরতে গিয়ে কাটা পড়ল রেলে, সে অনেকাল আগের কথা। শক্তির তখন ষোল-সতেরো হবে। সেদিন ছিল সরস্বতী পুজো।
তার এই ছাব্বিশ বছরের লাইফে তার বাপের থেকে বড় হারামি শক্তি আর দুটো দেখেনি! রোজগারের পুরো টাকা বাংলার ঠেকে ওড়ানো, তার মাকে কেলিয়ে টাকা নেওয়া, কারণে-অকারণে তাদেরকে ক্যালানো, মত্ত অবস্থায় লাথি মেরে স্টোভ উল্টে প্রায় অগ্নিকান্ড ঘটানো, এসব ছোটখাটো ব্যাপার ‘হারামি’ ভাবার কারণ নয়, মোটেও। এসব তাদের বস্তির ঘরে ঘরেই চলত এবং এখনও তাইই। রাজু কাটা পড়ার বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তার বাপ ভেগে গেল। কোথায় কোন এক ‘মেয়েছেলে’কে নিয়ে পাতল সংসার। আর ভাগার আগে তার মায়ের জমানো সামান্য টাকা কটাও চুরি করে নিয়েছিল কোন ফাঁকে! পিওর হারামি যাকে বলে। বাপের মুখটা মনে পড়লেই তাই শক্তির রাগ হয়, সাথে গা ঘিনঘিনে ঘেন্না।
যাইহোক, আসল কথায় আসা যাক, ডিম সেদ্ধ। বলাইবাহুল্য, শক্তি পড়াশোনা তেমন শেখেনি। ওই সিক্স-সেভেন, তারপরই ডাব্বার পর ডাব্বা খেয়ে স্কুল ছাড়ে। প্রথম প্রথম খালাসির কাজ। হাড়ভাঙা খাটুনির সাথে খিস্তি। তার ওপর আবার সব দিন যে কাজ থাকত তেমনও নয়, কোনো দিন হয়তো গিয়ে শুনল যে আজ তাকে আর লাগবে না। ব্যাস, পুরো দিনটা বেকার। তো, সিমেন্ট-বালির বস্তা, ইটের পাঁজা বইতে বইতে সদ্য যুবা শক্তি একদিন ইস্তফা দিয়ে দিল। লাভের লাভ বলতে ততোদিনে কাঁধ আর হাতের মাসল তৈরি হয়ে গেছে তার। এমনিতেই শক্তি বেশ হাট্টাগাট্টা ছিল।
এরপরই শক্তি ঠিক করল, নিজে কিছু একটা করবে। স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম শেষ হয়ে বাঁহতে যে সরু রাস্তাটা ঘুরে গেছে, ওখানেই রিকশা স্ট্যান্ড। প্যাসেঞ্জার সব ওই রাস্তা ধরেই যাতায়াত করে। কাঁচা-গুমটি দোকান দুধারে। সকলকেই চেনে শক্তি। ‘ভবেশদা’র চায়ের দোকান, বিস্কুট-কেকের সাথে টোস্ট-অমলেট-ডিম সেদ্ধ-পোচ। ‘বুল্টনদা’ বসে ঘুগনি নিয়ে। ‘অতনুদা’র সিগারেট-বিড়ির গুমটি। ‘নিত্যকাকা’র লুচি-তরকারির দোকানে ভিড় লেগেই থাকে, দুবেলা। এছাড়া বিকেল-সন্ধেতে, একজন ফুচকা আর একজন ঝালমুড়ি, এদের দুজনের অবশ্য দোকান নেই কোনো।
একদিন প্লাস্টিকের ঢাকা দেওয়া বড় বালতি করে ডজন খানেক ডিম সেদ্ধ নিয়ে সকাল সকাল বসে পড়ল শক্তি। প্লাস্টিকের একটা নিচু টুল সে বাড়ি থেকেই নিয়ে এসেছিল। মাঝখান দিয়ে চিড়ে, নুন-মরিচ মেরে, ছোট করে কাটা খবরের কাগজের ওপর অল্প গরম সেই ডিম সেদ্ধ প্রায় সবকটাই বিক্রি হয়ে গেল সেইদিন, দুপুর দুপুর। বিকেলে আবার এক ডজন নিয়ে উৎফুল্ল শক্তি চলে এল স্টেশনের ধারে। ইচ্ছে করেই সে ‘ভবেশদা’র থেকে এক টাকা কমে বেচছিল। কিন্তু ভাগ্য! দিন কয়েক যাওয়ার পরই কথাটা, বলা ভালো দামটা, ‘ভবেশদা’র কানে গেল। তারপরই এল বাগড়া।
ডিম ছাড়াও আরও কত কিছু বেচলেও, ভবেশ ভাবল ডিম সেদ্ধর কাস্টমারগুলো দিয়ে শুরু করে শালা শক্তি যদি তারপর অমলেট-পোচের কাস্টমারেও ভাগ বসায়! একটা স্টোভ কিনে নিলেই তো কেল্লাফতে করে নেবে মালটা। তবে তার একার ধকে শক্তিকে সে তুলতে পারবে না, সেটাও সে বুঝল। তাই, ভবেশ অন্যদের কান ভাঙানি দিল। বোঝালো যে এরপর শক্তি যদি ঘুগনি-ঝালমুড়ি এসবও কম দামে বেচে তো অন্যদের পেটেও লাথি পড়বে, সুতরাং শক্তিকে বসতে দেওয়া যাবে না। তাকে এখান থেকে তুলতে হবে।
সেই মতো প্ল্যান করে, ভবেশ, বুল্টন ও গণপতি, যে ঝালমুড়ি বেচে, তিনজন মিলে সেদিন বিকেলে ঘিরে ধরল শক্তিকে, সে তখন সবে এসে বসেছে। গামছা দিয়ে মুখের ঘাম মুছছে।
ভবেশঃ এই বাঁড়া, এখান থেকে ওঠ।
শক্তিঃ ওঠ মানে? কেন?
বুল্টনঃ ওঠ মানে ওঠ, বোকাচোদা। বলেই শক্তির গলার নিচে গেঞ্জিটা খামছে ধরে টেনে তুলল তাকে।
শক্তিঃ গায়ে হাত দেবে না বলছি, বুল্টনদা। কলার ছাড়ো।
ভবেশঃ তম্বি দেখ, বাঞ্চোতের! আবার, মুখে মুখে কথা! বলেই একটা সপাটে চড় কষিয়ে দিল শক্তির কানের ওপর। প্রায় তালা ধরে গেল তার কানে আর এক ধাক্কায় তাকে ছিটকে ফেলে দিল বুল্টন।
ওদিকে গণপতি, লিকলিকে নাটা মাল, গায়ের জোরে পারবে না, এক লাফি মেরে উল্টে দিল ডিম সেদ্ধর বালতিটা। শক্তি মাটিতে পড়ে কান চেপে দেখল ওরা তিনজন মিলে মাড়িয়ে মাড়িয়ে ভেঙে দিচ্ছে তার ডিম সেদ্ধগুলো।
আশে পাশে পথ চলতি পাব্লিক দাঁড়িয়ে পরে মজা দেখছে, সাথে উল্টোদিকে স্ট্যান্ডের রিকশওয়ালারাও। মনটা সেদিন এমনিতেই ভালো ছিল না শক্তির। সাতদিন প্রবল জ্বরে ভুগে উঠে তার মা কাজে গিয়েই শুনে এসেছিল প্রবীর মিত্তিরের বাড়িতে তাকে আর রাখবে না, এই মাসটাই শেষ। দুপুরে ভাত বেড়ে সেকথা সে বলেছিল শক্তিকে। তারপরই একটা মোটা কাঁকড় মুখে পড়ে শক্তির খাওয়ার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছিল। তারপর বিকেলে এই ঘটনা! শক্তির মাথায় যেন খুন চেপে গেল।
মাত্র কয়েক মিনিট। ওদিক থেকে দু-একজন এগিয়েও আসছিল থামিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু হাতের এক ইশারায় মোটরবাইকের ওপর থেকে তাদের ‘না’ করল বুম্বা। পেছনে বসে এক শাকরেদ। অতনুর দোকানের সামনে সিগারেট খাচ্ছিল সে। বুম্বা, এলাকার কাউন্সিলর যোগেশ সমাদ্দারের ভাগ্নে। এলাকার পুরো সিন্ডিকেট সেই দেখে, নাম কা ওয়াস্তে বিল্ডারের দোকান। আসলে বুম্বা মেপে নিতে চাইছিল এই কুড়ি-বাইশের ছোকরার দম।
মাত্র কয়েক মিনিটে যেটা ঘটলঃ গা ঝাড়া দিয়ে শক্তি উঠে দাঁড়াল। রাগে থরথর করে কাঁপছে। আগুন জ্বলছে তার ভেজা চোখে। ভবেশ, বুল্টন আর গণপতি তখনও পা দিয়ে ডিম সেদ্ধ ফাটাচ্ছে, আর খিস্তি করে চলেছে তার উদ্দেশ্যে। এগিয়ে গিয়ে ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলে ভবেশের শার্টের কলারটা ধরে তার মুখ লক্ষ করে এক টিক ঝাড়ল শক্তি। আর্তনাদ করে মাটিতে বসে পড়ল ভবেশ। নাক ফেটে গলগল করে রক্ত ঝরছে। এরপর বুল্টন, তাগড়া ও লম্বায় প্রায় শক্তির মাথায় মাথায়, ওকে ধরতে এল, প্রচন্ড এক রদ্দা কষাল শক্তি, বাঁহাতে ডানদিকের ঘাড় চেপে কঁকিয়ে উঠল বুল্টন। ছিটকে সরে গেল। গণপতি চুপ মেরে দাঁড়িয়ে গেছে। ভয় ও বিস্ময়ে আর ডিম সেদ্ধ ফাটাচ্ছে না। আসলে ও ভবেশ আর বুল্টনের ভরসাতেই এসেছিল। না হলে শক্তির মতো চেহারার মালকে সে কখনোই ঘাঁটানোর সাহস করত না। বুম্বার সিগারেট হাতেই পুড়ছে, টান মারতে ভুলে গেছে। মোটরবাইকের ওপর থেকে, চোখ সরু করে দেখেছে শক্তিকে, একদৃষ্টে। সমবেত জনতাকে অবাক করে দিয়ে এবার শক্তি একহাতে গণপতির দুপায়ের ফাঁক দিয়ে তার বিচি আর অন্যহাতে গলা ধরে তাকে তুলে ফেলল শূন্যে। তারপর প্রায় আছাড় মারার মতো ছুঁড়ে ফেলল তার ঝালমুড়ির ডালা ও স্ট্যান্ডের ওপর। মাটিতে সব জিনিশপত্র নিয়ে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকল গণপতি।
ওদিকে বুম্বা নেমে পড়েছে মোটরবাইক থেকে, দেখাদেখি সেই শাকরেদও। এবার থামানো দরকার। বুঝে গেছে সে শক্তির জিগর। কিন্তু ওরা থামানোর জন্য এগিয়ে আসতে আসতেই, বুল্টন পেছন থেকে এক ধাক্কা মারল শক্তিকে, শক্তি কোনো মতে টাল সামলে ঘুরে দাঁড়াতেই একটা সজোর টিক চালাল বুল্টন, ঠিক তার চোখ লক্ষ করে। লাগার সঙ্গে সঙ্গে চোখ চেপে চীৎকার করে মাটিতে বসে পড়ল শক্তি। গোমেদ বসানো আংটিটা, বুল্টনের মধ্যমার, সরসরি লেগেছে তার বাঁচোখে। মারামারি আর এগোয়নি। বুম্বা, তার শাকরেদ ও অন্যান্যরা মিলে আটকে দিয়েছিল। যদিও বুল্টন ছাড়া মারামারি করার ক্ষমতা আর কারোরই ছিল না তখন।
ভবেশের নাক শুধু ফাটেইনি, হাড় ভেঙে গিয়েছিল। গণপতির ডান কনুইতে ফ্র্যাকচার হয়েছিল, মাথার পেছন ফেটে চারটে স্টিচ পড়েছিল। সব থেকে বড় ক্ষতি হয়েছিল অবশ্য শক্তির। বাঁচোখের দৃষ্টি তার আর নেই বললেই চলে। ডানচোখের তুলনায় সামান্য ছোটও হয়ে গেছে। সেই থেকে, রাগে-দুঃখে, শক্তি আর ডিম বেচেও না, খায়ও না; সেদ্ধ, অমলেট, পোচ, ভুজিয়া কোনোটাই না।
আজ এতদিন পর নেহাত বাধ্য হয়েই ডিম-ভাত, এই ব্রিগেডে। বাবুয়ার মোটরবাইকের পেছনে বসতে বসতে একটা বিশ্রী শব্দ করে ঢেকুর তুলল শক্তি। বাবুয়া স্টার্ট দিল। ফিরতে ফিরতে শক্তির মনে হল ডিম সেদ্ধ যেমন তার একটা চোখ নিল তেমন তাকে তো দিলও অনেক কিছু! সেইদিন থেকে তাকে তো আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সেই বিকেলে তার সেই বিক্রম ও পরবর্তীতে ‘বুম্বাদ’র আশীর্বাদে আজ এলাকার সমস্ত লোক তাকে সমীহ করে চলে। ‘বুম্বাদা’র নিজস্ব প্রোমোটিং-এর যাবতীয় কাজকর্মের তদারকি তো বটেই সাথে আখখা এলাকার সমস্ত কন্সট্রাকশনের হিস্যা তোলা, সিন্ডিকেট চালানো, এসবই আজ শক্তি ও তার দলদল, এই বাবুয়া, মন্তা, সোনুর ওপরেই ন্যস্ত। রেলবস্তিতে হাতে গোনা যে কটা পাকা বাড়ি উঠেছে তার মধ্যে একটা শক্তির। হালে বানানো, হাল্কা নীল রঙের একতলা বাড়ি। তার মা এখন স্মার্ট টিভিতে সারাদিন বসে সিরিয়াল দেখে আর নিজের মনে রান্নবান্না করে। কারও বাড়ি আর ‘ঝিগিরি’ করতে যায় না। বরং তারাই রেখেছে টুকির মাকে, ঠিকে ঝি। তানিয়া-মুনিয়া স্কুলে পড়ে। তানিয়াকে এবছর মোবাইল কিনে দিয়েছে শক্তি। এলাকার কোনো শালার হিম্মত হয় না তার বোনেদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর। এই যে দাপট তার আজ, তা সবই তো সেই ডিম সেদ্ধর কারণেই! তবে আর মিছিমিছি ডিমের ওপর রাগ করে লাভ কী? আজ দিব্ব্যি লেগেছে তার ডিম-ভাত।
চলন্ত মোটরবাইকের পেছনে, ফুরফুরে হাওয়ায়, শক্তি হাত দিয়ে আড়াল করে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিল।
পরদিন সকালে উঠে রোজকার মতো শক্তি বাজারে গেল। বাজারের এক কোণে যে বুড়িটা ঝুড়িতে করে হাঁসের ডিম নিয়ে বসে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলঃ কত করে বেচ্চো, গো, মাসী?
মিনমিন করে বুড়ির উত্তর এলঃ বাইশ টাকা জোড়া, এবার বাবা, তুমি যা দেবে। শক্তিকে সে বিলক্ষণ চেনে। দাম জিজ্ঞেস করেছে এইই অনেক!
‘চারটে দাও। বড় বড় দেখে দেবে কিন্তু।’ বলে শক্তি পকেট থেকে মানিব্যাগ বার করে তার থেকে
দুটো কুড়ি টাকার নোট বার করল। স্বচ্ছ প্লাস্টিকের প্যাকেটে ডিমগুলো ভরে মুখে গেরো মেরে দিল বুড়ি। তার হাতে চল্লিশটা টাকা ধরিয়ে দিয়ে টুকিটাকি আরও কিছু বাজার করে বাড়িমুখো হল শক্তি।
আজ বহুদিন পর শক্তি, মায়ের হাতের ঝাল ঝাল সেই ডিমের কষা দিয়ে ভাত খাবে দুপুরে।
সৌপ্তিক চক্রবর্তী
সৌপ্তিক চক্রবর্তীর জন্ম (১৯৮৪) কলকাতায়। পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। লেখালিখির শুরুয়াত ২০০২ সালে। মূলত গদ্য লেখেন; মাঝে মধ্যে কবিতাও। প্রতিষেধক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ছিলেন আর্জেন্তিনায়।লেখালেখি আর তথ্যচিত্রে ধরেছেন সেদেশের জীবনযাপন। ভালোবাসেন রান্না করতে, হুইস্কি খেতে আর নিজের সাথে সময় কাটাতে। মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়েন ব্যাকপ্যাক নিয়ে, এদিক-সেদিক।
প্রকাশিত বই: পেডলার পান্না ও অন্যান্যরা (উপন্যাস, ২০২৫), গোপাল গোঁসাই (নভেলেট, ২০২৫), কমরেড নয়ন (নভেলেট, ২০২৪), লাশ (ছোট গল্প সংকলন, ২০২৩), বুয়েনস আইরেসের হাওয়া (নভেলেট, ২০২০) ইত্যাদি।
পরিচালিত তথ্যচিত্রঃ আর্জেন্তিনা আমা ইন্ডিয়া (২০১৮, আর্জেন্তিনা) ও রিহ্যাব (২০১৩, ভারত)।