প্রথম প্রকাশ: হুগলী ইমামবাড়া, ২০০৬, বৈখরীভাষ্য প্রকাশনা। দ্বিতীয় সংস্করণ: বইমেলা, ২০১৮, হপ্তাক কাচরা। প্রচ্ছদ: লেখক। রচনাকাল: সেপ্টেম্বর—ডিসেম্বর, ২০০৫।
…যাকে বলে ইন্দ্রনীল, তাকে
নিছকই উল্টে দেওয়ার গিমিক নয়। প্রতিটি কবিতা খুব সচেতনভাবে ক্রিয়েটেড উল্টোপথে আরেকটা প্যারালাল কবিতার কথা ভেবে। মানে আয়না রাখছি আর প্রতিবিম্বের বদলে প্রতিবস্তু তৈরি হচ্ছে। সবসময় যে ‘ক’ এর কবিতাটাই শুরুর কবিতা তা নয়। কখনো ‘খ’ প্রথমে লেখা, কখনো এর দু-লাইনের পর ওর দু লাইন, এভাবেই…
তবে কুড়িটি কবিতার প্রত্যেকটিই স্বতন্ত্র, সম্পূর্ণ ও একে অপরের থেকে পৃথক। কোন সিরীজ নয়। মানে, এরকমই গঠনের ইচ্ছে ছিলো। পাঠকের এটা না মনে হওয়ার একশো শতাংশ অধিকার। অন্যায় আবদার এটুকুই, প্রতিটা কবিতা আলাদা কবিতা ভেবেই যেন পাঠ করা হয়। মানা, না মানার অধিকার তো বর্করার্। এই আর কি এই আর।
(১. ক)
গাছের চেন টেনে নেমেছিলে, তুমি সেই কবেকার নির্জন জরিমানা
রূপোলী কামিনা আর আঁটছেনা চাঁদের বনেটে
ফলতঃ বডি পড়ে ঝাঁকড়া সীমানার
কোঁকড়ানো শুনশান, শীত ঘেঁটে
(১. খ)
কোঁকড়ানো শুনশান, শীত ঘেঁটে
ফলতঃ বডি পড়ে ঝাঁকড়া সীমানার
রূপোলী কামিনা আর আঁটছেনা চাঁদের বনেটে
গাছের চেন টেনে নেমেছিলে, তুমি সেই কবেকার নির্জন জরিমানা
(২. ক)
তন্দ্রা ফলো করি, না বলা গলিতে জাত্ হিম টলে একা, হোঁচটে ছয়লাপ
তিনদিক ঘোলা চুল থেকে তুমি শুরু চলে মোড়ে
কুয়াশা কুয়াশা ক’রে কোমায় ময়লা
হাওয়ায় কোমরকুচি ওড়ে
(২. খ)
হাওয়ায় কোমরকুচি ওড়ে
কুয়াশা কুয়াশা ক’রে কোমায় ময়লা
তিনদিক ঘোলা চুল থেকে তুমি শুরু চলে মোড়ে
তন্দ্রা ফলো করি, না বলা গলিতে জাত্ হিম টলে একা, হোঁচটে ছয়লাপ
(৩. ক)
তোমাকে চাটছে তালুতে পোষা পৌষ, গা ঢাকায় ভেড়াফুল ফোটে
কোরাসের গার্গেল, টেনিয়া দুপুরে ভাঙে পায়রাপুকুর
কুঞ্জের কার্ণিশে; দুচোখে মোরাম এসে জোটে
রন-পা’র রসে খেজুর ও নূপুর
(৩. খ)
রন-পা’র রসে খেজুর ও নূপুর
কুঞ্জের কার্ণিশে; দুচোখে মোরাম এসে জোটে
কোরাসের গার্গেল, টেনিয়া দুপুরে ভাঙে পায়রাপুকুর
তোমাকে চাটছে তালুতে পোষা পৌষ, গা ঢাকায় ভেড়াফুল ফোটে
(৪. ক)
কোনো ব্রনতলে এসো জিভ, বসো জিভ, দানা দানা বেদানা বেদানা জিভ
তার নিজস্ব প্রাঞ্জল উপচোয়, ভাসে পুঞ্জ পুঞ্জ চেরায়
ভেজা কি পাকিজা? খুব নাজ্? রম্তায় রাজী
পাল্কিতে জরায়ু জরায়ু
(৪. খ)
পাল্কিতে জরায়ু জরায়ু
ভেজা কি পাকিজা? খুব নাজ্? রম্তায় রাজী
তার নিজস্ব প্রাঞ্জল উপচোয়, ভাসে পুঞ্জ পুঞ্জ চেরায়
কোনো ব্রনতলে এসো জিভ, বসো জিভ, দানা দানা বেদানা বেদানা জিভ
(৫. ক)
নাছোড় ধরেছে করুনাবাগানে; মুখের বটানি, পীর দারুদিল সুপুরিনী
উরুতলা থেকে দূর, ফাইভ হার্টস শীত ঘোরে, একচুল দহ-র বরজে
উবু ঝরে, ফোঁটাজোকারের কাছে পাঁড় হু হু ঋণী
দরগায় দরগা ভিনি ভিনি ব্রীজের গরজে
(৫. খ)
দরগায় দরগা ভিনি ভিনি ব্রীজের গরজে
উবু ঝরে, ফোঁটাজোকারের কাছে পাঁড় হু হু ঋণী
উরুতলা থেকে দূর, ফাইভ হার্টস শীত ঘোরে, একচুল দহ-র বরজে
নাছোড় ধরেছে করুনাবাগানে; মুখের বটানি, পীর দারুদিল সুপুরিনী
(৬. ক)
এই ঘাগরা তুলে চলা সমাস, কার প্রাণে? এই রোহিনীবাক্যের অট্টরেপ?
হাড়ের ঢালে ডব্কা ফ্যালোপাইন, আঁকা ঝপটের লম্পটুয়া
জিগরে ফুটছে কুঁচকির হাসি, ওমের কষ ও প্রলেপ
জীরোগায়ের খাঁজে খাঁজে নিঝুম বটুয়া
(৬. খ)
জীরোগায়ের খাঁজে খাঁজে নিঝুম বটুয়া
জিগরে ফুটছে কুঁচকির হাসি, ওমের কষ ও প্রলেপ
হাড়ের ঢালে ডব্কা ফ্যালোপাইন, আঁকা ঝপটের লম্পটুয়া
এই ঘাগরা তুলে চলা সমাস, কার প্রাণে? এই রোহিনীবাক্যের অট্টরেপ?
(৭. ক)
সরকাইলো টিয়া, দাওয়ায় কচি লাগে, হাওয়ায় ঢালু ডলে টালমাটালির চাল
গলির ডাঁটায় রটে রোদ, ছোট ছোট ডুকরে শুকোয়, শোনো
কুয়ো বাজে, মৃদু, রুলটানা, কোলে থই এর ছাল
ভাঙা ঘরগাজ্মে বাদুর বিয়ানো
(৭. খ)
ভাঙা ঘরগাজ্মে বাদুর বিয়ানো
কুয়ো বাজে, মৃদু, রুলটানা, কোলে থই এর ছাল
গলির ডাঁটায় রটে রোদ, ছোট ছোট ডুকরে শুকোয়, শোনো
সরকাইলো টিয়া, দাওয়ায় কচি লাগে, হাওয়ায় ঢালু ডলে টালমাটালির চাল
(৮. ক)
মানে বাম্পার সহ্যখোর ঋতু, ক্ষেতে ক্ষেতে চিবুক পাকছে, আর তুমি সূর্যের হাম
জ্বরের কলেজে ঘুটঘুটে সোশাল, কড়া পড়ে নীট খিড়কির পেগে
হিম ধমকায় পাঠানশিশির, দিব্যির দুর্ব্বায় চেপে তার হুমহাম
আসলে চেনা ফুঁ-এর সঙ্গে ডাহা রাত জেগে
(৮. খ)
আসলে চেনা ফুঁ-এর সঙ্গে ডাহা রাত জেগে
হিম ধমকায় পাঠানশিশির, দিব্যির দুর্ব্বায় চেপে তার হুমহাম
জ্বরের কলেজে ঘুটঘুটে সোশাল, কড়া পড়ে নীট খিড়কির পেগে
মানে বাম্পার সহ্যখোর ঋতু, ক্ষেতে ক্ষেতে চিবুক পাকছে, আর তুমি সূর্যের হাম
(৯. ক)
যাকগে, গোধূলিরও গান্ধী হচ্ছে, এই তাক্ লাগলো বুকে পিঠে, আর কী ছোঁয়াচে মেঝে!
বাঁকা নিতে উদগ্রীব, দুরন্তে দয়া রগড়ে দিনকালদের ছড়ানো গ্রেফতারা
দক্ষিণ হাইব্রীড করে রাখো, দিকে দিকে প্রক্সি ঘষেমেজে
জেনেছো, বাঁ যার বাঁয়ে রেফ্ তার
(৯. খ)
জেনেছো, বাঁ যার বাঁয়ে রেফ্ তার
দক্ষিণ হাইব্রীড করে রাখো, দিকে দিকে প্রক্সি ঘষেমেজে
বাঁকা নিতে উদগ্রীব, দুরন্তে দয়া রগড়ে দিনকালদের ছড়ানো গ্রেফতারা
যাকগে, গোধূলিরও গান্ধী হচ্ছে, এই তাক্ লাগলো বুকে পিঠে, আর কী ছোঁয়াচে মেঝে!
(১০. ক)
থাবা তো ভাবছে গালে কংগ্রেস দিয়ে, কার্নিভোরে উঠে দ্যাখো দুলছে জখম ফিকে
যে ছিলো আছাড়, তার কাঁধে মৃদু পইপই করে ফুটেছে জন্তুখুকী
আঁচড় উড়িয়ে। বাউলপাড় হাওয়া, দিগ্বিদিকের ফ্রি-কিকে
আকাশে দাঁতের কিমা কুড়োচ্ছে ভিক্ষুক
(১০. খ)
আকাশে দাঁতের কিমা কুড়োচ্ছে ভিক্ষুক
আঁচড় উড়িয়ে। বাউলপাড় হাওয়া, দিগ্বিদিকের ফ্রি-কিকে
যে ছিলো আছাড়, তার কাঁধে মৃদু পইপই করে ফুটেছে জন্তুখুকী
থাবা তো ভাবছে গালে কংগ্রেস দিয়ে, কার্নিভোরে উঠে দ্যাখো দুলছে জখম ফিকে
চোখে চোখ বাজাচ্ছে বখাটে দাদ্রার রেঁলা
বুকের ভেতর কয়েক মাইল নীগ্রো,
আর স্নায়ু সেনটেন্স হয়ে কাঁপলো শরীর।
এইই তো পার্টনার;
পার্টনার জুড়ে ভ্রূক্ষেপ গর্জন করে।
চলো; সিঙ্গলহ্যান্ড খেলা
ব্রেনে আবার নতুন করে বাঘ হতে পারে …
অমিতাভ প্রহরাজ
১৯৭৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুরের পানিপারুল গ্রামে জন্ম। স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় বয়স কম হয়ে যাচ্ছিল বলে সার্টিফিকেটে জন্ম তারিখ ১৪ই ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে অমিতাভ’র ভ্যালেন্টাইন ডে শুরু। বাবার কর্মসূত্রে তিন/চার বছর বয়সে দুর্গাপুরে চলে আসা।সেখানেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক। ১৯৯৭ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। ২০০১ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক অমিতাভ বিজ্ঞাপন নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়তে আহমেদাবাদে Mudra Institute of Communications (MICA)-এ যান। বিজ্ঞাপন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ২০০২-এর শুরু থেকে কলকাতায় বিজ্ঞাপন সংস্থায় কপিরাইটার, পরবর্তীকালে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। কলকাতা, দিল্লি, পুনে শহরে নানান বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করলেও পেশাগত জীবনের থেকে সে অধিকতর নিবিষ্ট ছিল লেখালিখিতে।
অনেক ছোটবেলাতে তার লেখালিখির শুরু। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তে পড়তে অমিতাভ ‘শতদল’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন বন্ধু জয়দীপ নন্দীর সাথে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে এসে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার গল্প, কবিতা প্রকাশ পেতে শুরু করে। জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় কবি ইন্দ্রনীল ঘোষ-এর মতো সহপাঠী বন্ধুদের সাথে শুরু করেন একটা পত্রিকা – ‘রুকরুকা’। ২০০০ সালে দুর্গাপুরে কবি অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে শুরু করেন ‘বৈখরী ভাষ্য’ পত্রিকা। কবিতা, গদ্য, গল্প, টেক্সট-এর পাশাপাশি অমিতাভ প্রহরাজ আগ্রহী ছিলেন সাইকো লিঙ্গুইস্টিক্স নিয়ে। কগনিটিভ সাইকোলজির দিকপাল, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন অধ্যাপক, গিলবার্ট হার্মান-এর সাথে তার যোগাযোগ ছিল বলে জানা যায়।
২০২২ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর শরীর খারাপের খবর পেয়ে হাওড়ার শিবপুরে অমিতাভ প্রহরাজের বাসার দরজা ভেঙে ঢোকে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়। অচৈতন্য অমিতাভকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
প্রকাশিত বই: ‘চলো সিঙ্গলহ্যান্ড’ (বৈখরী ভাষ্য, ২০০৬), ‘অন্যব্যাপার’ (বৈখরী ভাষ্য, ২০১৩), ‘লেখামো’ (চিন্তা, ২০২২), ‘ঘুমোতে যাওয়ার আগের লেখা’ (চিন্তা, ২০২৩)।